একটি স্ট্যাটাস সর্বত্রে তোলপাড়
মেয়েরা মায়ের জাত
ছেলেরা গাধার জাত!
:: এম.আর. মাহামুদ ::
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েকটি স্ট্যাটাস নিয়ে চকরিয়ায় বিতর্কের ঝড় চলছে। এ বিতর্কিত স্ট্যাটাসের জননী হচ্ছে আলোচিত কয়েকজন মেয়ে। তবে তাদের আইডি সত্যিকার কিনা জানা যায়নি। হয়তো সত্যও হতে পারে, অথবা ভূয়া আইডিও হতে পারে। তারপরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় একজন পুরুষ হিসেবে নিজে অপমান বোধ করছি। হয়তো আমার মত সব পুরুষই বিষয়টি নিয়ে অপমানবোধ করবে। এছাড়া বিষয়টি ধর্মীয় অনুভূতিতেও প্রচন্ড আঘাত হানছে। কবির ভাষায় বলতে হয় “এ বিশ্বে যা কিছু চির কল্যানকর, যার অর্ধেক করেছে নারী; অর্ধেক করেছে নর”। কবির ভাষা ব্যাখ্যা করলে মূল কথা আসে, নারী ও পুরুষ পরষ্পর একই সুতায় গাথা। মেয়ে ছাড়া ছেলেরা যেমন পরিপূর্ণ নয়, তেমনি ছেলেরা ছাড়া মেয়েরাও অপরিপূর্ণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গেছে স্ট্যাটাস দাতা মেয়েরা হলেন- ফারাজানা আক্তার, তাসনিম তামান্না, টিনা সুলতানা বকুল, রিনা আক্তার। তাদের পরিচয় সনাক্ত করার সুযোগও আমার নেই। জানা প্রয়োজনও নেই। কারণ আমিও মেয়ের বাবা।
ফিরে যাই আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে (অন্ধকার যুগে)। সে সময় মেয়েদের জীবন্ত কবর দেয়ার রেওয়াজ ছিল। হয়তো তারা নবী করিম (সাঃ) এর আগমনের আগে বর্বর ছিল বলে এমন জঘন্য কাজ করতে দ্বিধা করতোনা। এখনতো আর সেই যুগ নেই। তারপরও গুটি কয়েকজন অপরিপক্ক মেয়ে এমন আপত্তিকর কথা বলে সমাজে বিতর্ক সৃষ্টি করতে গেলো কেন তা বুঝিয়ে আসছেনা। সমাজে কিছু মানুষ আছে, যারা মলম লাগাবার উদ্দেশ্যে ভাল শরীর চুলকিয়ে ঘাঁ করে, মনে হচ্ছে তারা ঐ শ্রেণীভুক্ত। ছেলে ছাড়া মেয়েরা অপরিপূর্ণ, তেমনি মেয়ে ছাড়া ছেলেরাও অপরিপূর্ণ। একজন ভাল স্বামীর সন্ধ্যানে মেয়ে পক্ষ কতই আকাঙ্খিত থাকে, তা একমাত্র কণ্যাদ্বায়গ্রস্থ অভিভাবকরাই জানে। সেক্ষেত্রে ওইসব মেয়ে এমন স্ট্যাটাস দেয়ার পেছনে কোন রহস্য আছে। ভারতে নির্বাসিত আলোচিত-সমালোচিত নারীবাদী ডাঃ তছলিমা নাসরীনের কাছ থেকে শিক্ষা নিলে ওইসব মেয়ে এমন স্ট্যাটাস দেয়ার সাহস কোনদিন পেতোনা। আমাদের দেশ এখনো পুরুষ শাষিত পরিবার নির্ভর, নারী শাষিত পরিবার নয় বলা চলে। তবে রাষ্ট্রীয় ভাবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী ও সম্প্রতি জেলে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীও এমন মন্তব্য করতে শুনা যাইনি। স্ট্যাটাস দেয়া ওই মেয়েদের আচরণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন- আমার প্রিয় দুই অনুজ হেলাল খান ও জুবাইর, দু’জনই প্রবাসী। তাদের পরিবার পরিজন সবই আছে। কিন্তু স্ত্রী সন্তান, মা-বাবার জীবিকার সন্ধানে প্রবাসে দিন কাটাচ্ছে। নিশ্চই মায়ের জাতের সম্মান দিতে গিয়ে এরা প্রবাসে দিন কাটাচ্ছে। তাদেরও ইচ্ছা হয়, স্ত্রী পরিজনের সাথে দেশের মাটিতে দিন কাটাতে। কারণ, স্ত্রী, ছেলে-সন্তান, মা-বাবা, ভাই-বোনদের চাহিদা মিঠাতে গিয়ে দেশ ছেড়ে বিদেশে গেছে। নাহলে কেউকি সখে প্রবাসে দিন কাটায়! মেয়েদের তা বুঝা দরকার। একজন ভাল ছেলে ছাড়া একজন মেয়ের কোন গতি নেই। পানি ছাড়া যেমন মাছ বাচেনা, তেমনি ভাল ছেলে ছাড়া মেয়েদের কোন গতিও নেই। এসব ভুলে গেলে চলবেনা। যেসব মেয়ে এসব স্ট্যাটাস দিয়েছে, নিশ্চই তারা শিক্ষিত ও ভদ্র ঘরের সন্তান হতে পারে। তবে অকপড়ে মন্তব্য করা যায়, তারা মানসিক বিকার গ্রস্থ। নিশ্চয় পরিবারের পুরুষ সদস্যদের অগোচরে এসব অপ-প্রচার ফেইসবুকে চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কি তাদের সম্মান বাড়ছে। ওইসব মেয়েদের নিয়ে অনেকে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করছে। যা দেখে একজন অভিভাবক হিসেবে লজ্জিত হচ্ছি। তাদের স্ট্যাটাসের ভাষায় ছেলেরা যদি গাধা হয়, মেয়েরা কি হবে? প্রত্যেক প্রাণীরই বিপরীত লিঙ্গ আছে। সেক্ষেত্রে মেয়েদের কি বলতে হবে। এমন বাজে ও খারাপ মন্তব্যের প্রতিবাদের সরব হওয়ায় ছেলেদের পক্ষ থেকে আমি প্রবাসী দুই অনুজকে সাধুবাদ জানাই। প্রবীণ এক ব্যক্তি স্ট্যাটাসটি পড়ে মনের দুঃখে বলতে শুনা গেছে- “একজন ভাল ছেলে ছাড়া একজন মেয়ে যেন নিষ্ফলা গাছ”। অপর এক শিক্ষকের মন্তব্য- “টায়ার ছাড়া টিউবের কোন কদর নেই” এটুকু বলে তিনি আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই মেয়েদের স্ট্যাটাসের জবাব দিতে গিয়ে প্রতিদিনই শতশত ব্যক্তি এমন সব মন্তব্য করছে যা পাঠযোগ্য নয়। যা নারী ও পুরুষ জাতীর জন্য কলঙ্কজনক অধ্যায় ছাড়া আর কিছুই নয়। দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মত ঘটনা হুহু করে বেড়ে যাচ্ছে। এর পেছনে ছেলেরা যেমন দায়ী, মেয়েরা কি একেবারে ধুয়া তুলসি পাতা! নারীরা নির্যাতিত হলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করার সুযোগ পায়। এতে অভিযুক্তরা দোষী হোক আর না হোক লাল দালানের মেহমান হিসেবে রজনী কাটাতে হয়, কিন্তু নারী কর্তৃক পুরুষ নির্যাতিত হলে কি আর ওভাবে মামলা করার সুযোগ আছে? সব কথার শেষ কথা মেয়েরা মায়ের জাত তা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। তবে পুরুষেরা যে গাধার জাত এমন কথাটি মূর্খ্য মেয়েদের মুখে শোভা পায়। তারপরও আমার প্রবাসী দু’ অনুজকে অনুরোধ করব, বিষয়টি নিয়ে আর কাদা ছুড়াছুড়ি নয়। কারণ “কুকুরের কাজ কুকুরে করেছে কামড় দিয়েছে পায়, তাবলে কি কুকুরকে কামড়ানো মানুষের শোভা পায়”।
লেখক : মাহমুদুর রহমান মাহমুদ
পাঠকের মতামত: